ব্লকচেইন দুইটি শব্দের সমন্নয়ে গঠিত অর্থাৎ ব্লক এবং চেইন দুুইটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দ, এই দুইটি শব্দ একত্রিত হয়ে একটি শব্দ তথা ব্লকচেইন তৈরি হয়েছে।

ব্লকচেইন এর উত্তপত্তি

ক্রিপ্টোগ্রাফিক টেকনোলজি ব্যবহার করে ব্লকচেইন নিয়ে সর্বপ্রথম কাজ করা হয় ১৯৯১ সালের দিকে, যদিও তা সফলতার মুখ দেখতে না পাওয়ার ফলে তার ব্যবহার বিস্তার লাভ করতে পারেনি। এর প্রকৃত ব্যবহারকে কাজে লাগান ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো নামে এক পরিচয় বিহীন ব্যক্তি। যিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা বিটকয়েনের লেনদেনের জন্য ব্লকচেইন টেকনোলজির ব্যবহার শুরু করেন । বর্তমানে যার ফলে ব্লকচেইন এর ব্যবহার সম্পর্কে আজ বিশ্বব্যাপি সচেতনতা বাড়তেই আছে।

যেহেতু ব্লকচেইন এর যাত্রা সফলভাবে শুরু হয়েছে বিটকয়েন ব্যবহারের মাধ্যমে, তাই সহজেই ব্লকচেইনকে বুঝতে হলে বিটকয়েন কিভাবে ট্রান্জেকশন হয় তা দেখা গেলে বিষয়টি সহজে বুঝা যায়।

ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে?

সহজ ভাষায় ব্লকচেইন হচ্ছে ডিস্ট্রিবিউটেড ওপেন লেজার। আরেকটু সহজ ভাষায় বলি। আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন অফিস-আদালতে একটি বড় খাতা থাকে যাতে বিভিন্ন তথ্যাদি লিপিব্ধ করা হয়। এই খাতাকে বলা হয় লেজার। যা শুধু সেই অফিসের স্টাফ ব্যতিত কেউ দেখতে পারে না। ঠিক ব্লকচেইন ব্যবহার করে যে ট্রান্জেকশন করা হয় তা চেইন স্টিমে একটি লেজারে স্টোর হয়ে যায়। যা সকলে দেখতে পারে।

মনেকরেন, আমি কোন ব্যক্তিকে ব্লকচেইনের মাধ্যমে কোন তথ্য বা সহজে বুঝতে গেলে বিটকয়েন পাঠাবো। তহলে আমি যখন সেই ব্যক্তির ঠিকানাই পাঠাবো তখন আমার সেই ট্রান্জেকশনকে একটি ব্লকের মধ্যে নেওয়া হবে। এরপর সেই ব্লকটিকে সিকিউরিটি পারপাসে একটি (#) হ্যাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আর এক একটি ব্লক অপরটির সাথে সংযুক্ত। প্রতিটি ব্লকে তার পূর্বের ব্লকের এ্যড্রেস থাকে এইভাবে একটি ব্লককে আরেকটি ব্লকের সাথে সংযুক্ত করা হয়। অপরদিকে একই সময়ে যত ট্রান্জেকশন হয় তার সকল ট্রান্জেকশনকে একটি ব্লকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যার জন্য হাজার হাজার কম্পিউটার কাজ করে। এবং সকল কম্পিউটারে সেই ব্লকটির একটি করে কপি থাকে। এই ভাবেই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক বা চেইনের সৃষ্টি হয়। আর চেইনের মাধ্যমে যে নতিপত্র ভবিষতরে জন্য জমা হয় এটিকেই লেজার বলা হয়। যেখান থেকে আমারা সকলেই লেনদেন গুলো দেখতে পাই।

সিষ্টেমের শক্তির উপর নির্ভর করে প্রতিটি ব্লক তৈরি হতে ১০ মিনিটের কম বা বেশি সময় লেগে থাকে। একটি ব্লক আরেকটি ব্লকের সাথে যুক্ত হয়ে একটি চেইন সিষ্টেম তৈরি করে। আর এর জন্যই একে ব্লকচেইন বলা হয়ে থাকে।

ব্লকচেইনের সুবিধা

ব্লকচেইন এমন একটি টেকনোলজি যা খুবই নিরাপদ এবং দ্রুতগামী। নিরাপদ এই কারনে যে, আপনি ব্লকচেইন ব্যবহার করে যে ট্রান্জেকশন করবেন তা হ্যাক করে এর মাঝে গড়মিল তৈরি করা অসম্ভব। মনে করেন আপনি ব্লকচেইন ব্যবহার করে কাউকে কোন পেমেন্ট করলেন, তখন সাথে সাথেই আপনার এই তথ্যটি এই সিষ্টেমের সাথে জড়িত সকল কম্পিউটারে পৌছে যায়। আর তথ্যটিকে ভ্যলিডিটি দেওয়ার জন্য আপনার ট্রান্জেকশনের সাথে পুর্বের ট্রান্জেকশনের হ্যাস যোগ হয়ে যাবে। এইভাবে আপনার ট্রান্জেকশনের হ্যাসটি পরবর্তী ট্রান্জেকশনের হ্যাসের পূর্ব হ্যাস হিসেবে লিংক হয়ে যাবে। এই ভাবে চেইন সিষ্টেম চলতেই থাকে।

যদি কেউ ব্লকচেইন টেকনোলজিকে হ্যাক করে এর তথ্যের মাঝে কোন গরমিল করতে চাই তবে তা করা অসম্ভব। কারন তা করতে হলে, তাকে একই সময়ে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করতে হবে। কারন আগেই বলেছি প্রতিটি ট্রান্জেকশন তৈরি হওয়া মাত্রই তার তথ্য হাজার হাজার কম্পিউটারে পৌছে যায়। আর ততোধিক ট্রান্জেকশন মিলে একটি ব্লক তৈরি হতে প্রায় সময় লাগে কমবেশি ১০ মিনিট মত। আর তাই একটি ব্লকের সম্পূর্ণ তথ্য পরিবর্তন করতে; হ্যাকারের হাতে ১০ মিনিটের কম সময় থাকবে। আর এই সময়েরে মধ্যে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করা কাল্পনিক।

ব্লকচেইনের জনপ্রিয়তা

ব্লকচেইন হ্যাক কতটা অসম্ভব তা উপরের তথ্য থেকে হয়তো সহজেই অনুমান করতে পারছেন। এছাড়া খুব কম সময়ের মাধ্যমে আপনি আপনার লেনদেন সম্পূর্ণ করতে পারছেন। এর ফলে দিন দিন ব্লকচেইনের জনপ্রিয়তা বাড়তেই আছে। যদিও এর সফলতা ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। কিন্তু এর ব্যবহার এখন অনেক কাজের জন্য করার পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে। যেমন কিছু কিছু ব্যাংক এর ব্যবহার করা জন্য পরিক্ষা চালাচ্ছে। এই ভাবে দিন দিন এর ব্যবহার নিয়ে গবেষনা চলতেই আছে।



0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *