যেকোন প্রতিষ্ঠান বা কম্পানি তাদের নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে নিয়ে আসতে চাইলে, ICO অথবা IEO করে থাকে। সহজভাবে বলতে গেলে, কোন কয়েন; মার্কেটে আসার প্রথম ইভেন্টই হচ্ছে ICO বা IEO. আর যারা ভালমানের প্রফিটের আসাই ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে ট্রেড করেন, তারা এই ইভেন্টের প্রতি বেশ গুরুত্ব প্রদান করেন। তাই নতুন পুরাতন ইনভেস্টেররা ICO নাকি IEO বেছে নিবেন, তা নিয়েই আজ আমাদের আলোচনা।

ICO নাকি IEO

ICO কি?

ICO এর পূর্ণ রূপ Initial Coin Offer অর্থাৎ যেকোন প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে নিয়ে ট্রেড করার পূর্বে ফান্ড কালেক্ট করে। আর এই ফান্ড কালেক্ট করার জন্য তারা তাদের কয়েনের নূন্যতম একটি দাম নির্ধারণ করে থাকে। আর সেই নির্ধারিত দামে প্রতিষ্টান গুলো তাদের কয়েন গুলো বিক্রি করার জন্য যে ইভেন্টের আয়োজন করে থাকে তাকেই ICO বলে।

IEO কি?

ICO আর IEO এর মাধ্যে তেমন কোন প্রার্থক্য নেই। এই দুইটির ‍উদ্দেশ্যই একি। শুধু মাত্র টোকেন বা কয়েন বিক্রির ধরন আলাদা। IEO এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে Initial Exchange Offer. যেই প্রতিষ্ঠান তাদের কয়েন পাবলিককি বিক্রি করার জন্য ICO করে থাকে তারা নিজেরাই এই ইভেন্টের আয়োজন করতো। অর্থাৎ এখানে কোন থার্ড পার্টি থাকতো না। আর IEO করার জন্য থার্ড পার্টিকে বেছে নেওয়া হয়েছে অর্থাৎ এক্সচেন্জ সাইটের মাধ্যমে টোকেন সেল করা হয়। কিন্তু যেভাবেই করা হোক না কেন। উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই, আর তা হচ্ছে ফান্ড কালেকশন করা।

এখন তাহলে ভাবতে পারেন দুটির উদ্দেশ্যই যখন এক, তবে এত কাহিনী করার কি দরকার! হ্যাঁ অনেকেরই হয়তো এই প্রশ্ন জাগতে পারে। তো চলুন যেনে নিই এই দুইটি মধ্যে কোনটি উত্তম।

ICO নাকি IEO কোনটি উত্তম?

২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত যতগুলো প্রতিষ্টান তাদের কয়েন মার্কেটে এনেছে তার সবই ICO এর মাধ্যমে। হাতেগনা দুই-তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া। ২০১৯ সাল থেকেই গনহারে শুরু হয়েছে IEO যাত্রা। যদিও ICO এবং IEO এর উদ্দেশ্য একই তথাপি এর মাধ্যে দৃষ্টিগোচর হবার মতো ভালই পার্থক্য রয়েছে। এই দুইটির মাধ্যে যে পার্থক্য গুলো রয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর পার্থক্য গুলো তুলে ধরলে খুব সহজেই আপনি নিজে থেকেই বিবেচনা করে বলতে পারবেন, ICO নাকি IEO কোনটি সব থেকে উত্তম এবং নিরাপদ।

আমরা যারা ICO করে থাকি বা ICO সম্পর্কে ধারনা রয়েছে তারা বলতে পারবেন যে, মার্কেটে কতগুলো ভুয়া ICO হয়েছে বা হতে আছে। ভুয়া ICO এর পরিমান বলতে গেলে বলা যায় যেমন মরুভুমিতে দূর থেকে বালির দিকে তাকালে মনে হয় পানি জমে আছে। এই রকম ভাবে আপনি যতক্ষন না কাছে গিযে নিশ্চত হবেন যে, আসলে পানি নাকি মরিচিকা ঠিক তেমনটাই ICO এর অবস্থা। বাইরে থেকে মনে হবে লেজিট ICO কিন্তু যখন সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ‍খুটিনাটিঁ খুজে দেখবেন তখন দেখবেন সেটা একটা ভুয়া ICO হতে যাচ্ছে।

ICO এবং IEO এর মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য গুলো হচ্ছে:

রিসার্চঃ- ICO এর ক্ষেত্রে লেজিট ICO খুজে পেতে আপনাকে ভাল পরিমান রিসার্চ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে কোন সময় আপনার ভুলও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু IEO এর জন্য আপনাকে তেমন কোন রিসার্চই করার প্রয়োজন হবে না। কারন যে এক্সচেন্জ থেকে IEO করা হবে তারাই এই কাজটি করে থাকবে। কারন তারা কোন ভুয়া কম্পানিকে সহযোগিতা করবে না। যার কারণে IEO তে ইনভেস্ট করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। যেটা ICO তে একটি সন্দেহের বিষয় থেকেই যাই। তাই বলে আমি আপনাকে রিসার্চ করা থেকে নিরুৎসাহিত করছি না। অবশ্যই রিসার্চ করবেন, কারন ইনভেস্ট করার পুর্বে আপনারও ধারনা থাকা দরকার কোন জায়গায় ইনভেস্ট করতে যাচ্ছেন।

research

ট্রেডিং মার্কেটঃ- কোন কম্পানির ICO হওয়ার পর কোন মার্কেটে তারা ট্রেড শুরু করবে, কবে করবে, এই নিয়ে বাড়তি চিন্তা মাথাই কাজ করে। কারণ ভাল কোন এক্সচেন্জ মার্কেটে ট্রেড শুরু না করলে, ভাল ফলাফল আশা করা যায় না। কিন্তু IEO তে এই চিন্তা করা লাগে না। কারণ যেই এক্সচেন্জ মার্কেটে IEO করা হবে সেই মার্কেটেই তাদের প্রথম ট্রেড শুরু হবে। আর আপনি যেই এক্সচেন্জ মার্কেটে আস্থা রাখেন শুধু সেই এক্সচেন্জ মার্কেটের IEO করবেন এটাই স্বাভাবিক বিষয়।

ট্রেডিং টাইমঃ- ICO করতে গিয়ে দেখা গেছে অনেক কম্পানি ICO কম্পিলিট হওয়ার পর মার্কেটে আসতে দীর্ঘ সময় নিয়েছে। এই ক্ষেত্রে ১ মাস থেকে শুরু করে ৫ মাসের বেশি সময় নিয়েছে শুধু ট্রেডিং মার্কেটে আসতে। যেমন, Wanchain এর কথাই বলা যেতে পারে। এতে করে আপনার ইনভেস্ট আটকে থাকে। কিন্তু IEO করলে এই প্যারা থেকে বাঁচা যায়। কারন যেহেতু IEO এক্সচেন্জ মার্কেট গুলোতেই করা হচ্ছে যার ফলে, কোন কয়েন বিক্রির পর কোন্‌ মার্কেটে যোগ হবে এই নিয়ে বাড়তি কোন ঝামেলা থাকছে না। তার ফলে কয়েন বিক্রি হবার পর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই ট্রেডিং এর জন্য কয়েন রিলিজ করা হচ্ছে।

উপরের কয়েকটি পার্থক্যই হয়তো আপনার মধ্যে ধারনা নিয়ে এসেছে যে, ICO করাটা ভাল হবে নাকি IEO করা। অবশ্য অনেকেই অনেক রকম যুক্তি দাড় করাতে পারে। তবে আমার কাছে ইনভেস্ট করার জন্য নিসন্দেহে IEO উত্তম এবং নিরাপদ একটি পথ।

কোন্‌ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ মার্কেটের IEO করবেন?

বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ মার্কেটের অভাব নেই। বর্তমানে কয়েনমার্কেটক্যাপ এর তথ্য অনুযায়ী ১৭,৮১৪ টি ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ মার্কেট রয়েছে। এখন বিভিন্ন ICO প্রতিষ্টানের মতো এখানেও অনেক ফ্রড মার্কেট পাবেন। যেখানে IEO তো দূরের কথা ট্রেড করাটাও রিস্কি। তাই, IEO করার জন্য শুধু মাত্র সেই সব ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ মার্কেট বাছাই করবেন যেই গুলো ট্রাসটেড এবং সেই সাথে জনপ্রিয়। এই ক্ষেত্রে আপনি নিম্নক্ত ক্রেপ্টো এক্সচেন্জ মার্কেট গুলো বাছাই করতে পারেন।

১) বিন্যন্স (Binance)

২) হাওবি (Huobi Global) বাংলাদেশের জন্য কোন ট্রেডিং এলাও না।

৩) কুকয়েন (KuCoin)

৪) ওক্সে (OKEx) বাংলাদেশের জন্য কোন ট্রেডিং এলাও না।

৫) বিট্রেক্স (Bittrex)

৬) বিটম্যক্স (BitMax) বাংলাদেশের জন্য ট্রেডিং এলাও করে কিন্তু একাউন্ট ভেরিফিকেশন এলাও না।

উপরুক্ত ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ গুলো থেকে আপনি যে কোন এক্সচেন্জে হওয়া IEO তে অংশগ্রহন করতে পারেন। কারন উল্লেক্ষিত ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ সাইট গুলো বর্তমানে জনপ্রিয় এবং সেই সাথে ট্রাসটেড।

আমি মনে করি IEO তে ইনভেস্ট করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা জিরো পার্সেন্টে নেমে আসবে। তবে হ্যাঁ IEO করার জন্য ট্রাসটেড এবং জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ মার্কেট বেছে নিতে হবে।

বি.দ্রঃ- এখানে কাউকে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে ইনভেস্ট করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে না। শুধু মাত্র যারা নিজ দায়িত্বে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেড করেন তাদের জন্য তথ্য গুলো তুলে ধরা হয়েছে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *