বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে যে বিষয়টি নিয়ে পুরো পৃথিবীতে অনেক বড় একটা ইসুতে পরিণত হয়েছে তা হচ্ছে বিটকয়েন। উন্নয়নশীল থেকে উন্নত সকল দেশের জন্য বিটকয়েন যেন মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিটকয়েনের যে দাম পৌছেছিল তার কারণে। ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে বিটকয়েনের দাম ২০ হাজার ডলারে গিয়ে পৌছেছিল। আর তারপর থেকেই বিটকয়েনের প্রভাব নিয়ে সবার মাথা ব্যথা শুরু হয়।

এই বিটকয়েনের দাম কেন এত লাগাম ছাড়া? এর কার মূল কারন এটি কোন দেশের লোকাল কারেন্সির মত কোন কারেন্সি না। এটি কোন দেশের একক কারেন্সি বা কয়েন না। তাই এর উপর কোন দেশের নিয়ন্ত্রন নেই। এটি একটি ডিসেন্ট্রালাইজড্‌ কারেন্সি, যা ব্লকচেইন টেকনোলজি ব্যবহার করে লেনদেন করা হয়। আর এটিই হচ্ছে দাম লাগামহীন হওয়ার মূল কারণ। যদিও বিটকয়েনেকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য উন্নত দেশ বিশেষ করে আমেরিকান রেগুলেশন অর্থরিটি SEC উঠেপড়ে লেগেছে। যদিও সেটা সম্ভপর বিষয়বলে মনে হয় না। যাইহোক, সময়ই তা বলে দেবে।

বিকয়েন ট্রেডিং কি বৈধ্য?

যেকোন বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিষয়ে কাজের জন্য বৈধ্যতা/লিগ্যালিটি প্রয়োজন। যেকোন দেশে, কোন প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে চাইলে, প্রথমে সেই দেশেরে সরকারের কাছ থেকে বৈধতা নিতে হয়। আর তাই আমাদের বিটকয়েন ট্রেডিং করার পূর্বে জানা দরকার, আমাদের দেশে কি বিটকয়েন ট্রেডিং বৈধ্য? আপনি যেই দেশেরই নাগরিক হননা কেন আপনি একটু গুগল করলেই এর উত্তর পেয়ে যাবেন। এখন একটি বিষয় আপনার দেশে যদি বিটকয়েন ট্রেডিং বৈধ্য না হয় তবে কি আপনি বিটকয়েন ট্রেডিং করতে পারবেন না? বিটকয়েন ট্রেডিং যদি আপনার দেশে বৈধ্য না হয় তবে আপনি বিটকয়েন ট্রেডিং করতে পারবেন না, তা কিন্তু ঠিক না। যেমন ফরেক্স এখন পর্যন্তু অনেক দেশেই বৈধ্য না, তাই বলে কি সেই সব দেশের জনগণ ফরেক্স ট্রেডিং করে না মনে করেছেন? ঠিকই করে, তবে হ্যাঁ এখানে একটি বিষয়ে কথা রয়ে যায়। আর তাহলো, বৈধ্যতা দেওয়া দেশে আর নিষেধাগ্গা আরোপ করা দেশের মধ্যে একটুতো জটিলতা আছেই।

আপনি যদি এমন কোন দেশের নাগরিক হোন যেই দেশে বিটকয়েন ট্রেডিং এ কোন বাধা নেই। অর্থাৎ যেই দেশে বিটকয়েন ট্রেডিং বৈধ্য; সেখানে, আপনি যে ট্রেডিং এক্সচেন্জে ট্রেডিং করছেন, তাতে আপনার একাউন্ট নিয়ে কোন সমস্যা হলে অর্থাৎ সেই এক্সচেন্জ যদি আপনার টাকা/ডলার/বিটকয়েন/ক্রিপ্টোকারেন্সি আত্বসাৎ করে নেই বা আত্বসাৎ করার চেষ্টা করে তবে আপনি সরকারিভাবে সহায়তা নিতে পারবেন আইনের আশ্রয় গ্রহন করে। অর্থাৎ বিটকয়েন ট্রেডিং বৈধ্য, এমন দেশের আপনি নাগরিক হয়ে থাকলে আপনার অর্থ চুরি হবার ভয় নেই।

আর আপনি যদি এমন দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন যেই দেশে বিটকয়েন ট্রেডিংকে বৈধ্যতা দেয়নি। সেইক্ষেত্রে কিন্তু; এক্সচেন্জ সাইটগুলো আপনাকে ট্রেডিং করা থেকে বঞ্চিত করবে না (ব্যতিক্রম কিছু এক্সচেন্জ সাইট ছাড়া)। তবে সেই এক্সচেন্জ সাইটগুলো আপনার অর্থ আত্বসাৎ করে নিলে বা করার চেষ্টা করলে আপনি কোন ভাবেই সরকারি সহয়তা আশা করতে পারবেন না। অর্থাৎ আপনার একান্তু রিক্সেই আপনাকে ট্রেডিং করতে হবে। এছাড়া ভিন্ন কোন বিষয় না।

বিটকয়েন কোথায় ট্রেড করা হয়?

আমি যখন এই লিখা প্রকাশ করছি তখন কয়েনমার্কেট এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিটকয়েন ট্রেডিং এর জন্য ১৫৮১৭/= (পনের হাজার আটশত সতের) -টি এক্সচেন্জ মার্কেট রয়েছে। সংখ্যাটি অনেক বড়। আপনি এর মধ্য থেকে আপনার পছন্দমত একটি বা একধিক বেছে নিতে পারেন। তবে হ্যাঁ ট্রাসটেড এবং সিকিউর এর বিষয়টি মাথা থেকে ফেলে দিবেন না। এইদিক থেকে আমেরিকান ট্রেডিং কম্পানি কয়েনবেজ (Coinbase) ছিল একটি নামি দামি কম্পানি। যদিও এর স্বীমাবদ্ধতার কারনে এটি তার জনপ্রিয়তা অনেকটাই হারিয়েছে। বর্তমানে সিকিউরিটি, ট্রেডিং ফি, ট্রাসটেড এসকল বিষয় বিবেচনায় চাইনিজ ট্রেডিং কম্পানি বিন্যান্স (Binance) সবার শীর্ষে। যদিও দেড় বছর আগে বিট্রেক্স (Bitrrex) সেই জায়গা দখল করে রেখেছিল। এছাড়া অনেক ফরেক্স মার্কেট আছে যেখানে বিটকয়েন ট্রেডিং করা হয় যেমন- এক্সএম মার্কেট। তবে আমি সাজেষ্ট করবো আপনি যদি শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং করতে চান, তবে অবশ্যই ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য যেই মার্কেট গুলোর জন্ম হয়েছে সেই সব মার্কেটেই ট্রেড করার জন্য।

কিভাবে একটি ট্রেডিং একাউন্ট খুলবেন?

বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিংয়ের জন্য একাউন্ট খোলা তেমন কোন জটিল বিষয় নই। আপনি এতদুর আসার পরে আমার লিখা যখন পড়ছেন তখন ধরেই নিব আপনার ফেসবুক/টুইটার একাউন্ট আছে। আর যখন আপনি ফেসবুক/টুইটার এর মত সাইট ব্যবহার করেন তবে আপনার কাছে কোন সাইটে একাউন্ট খোলা কোন জটিল বিষয় না। অন্যান্য সাইটের মতো আপনি এখানেও আপনার ইমেল, নাম, মোবইল নাম্বার এর তথ্য দিয়ে একাউন্ট খুলবেন। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে একাউন্ট খোলা তেমন কোন বিষয় না, এর মূল বিষয় একাউন্ট খোলার সময় এবং একাউন্ট খোলার পরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা।

ট্রেডিং মার্কেটে একাউন্ট খোলার সময় যা করনীয়।

আপনি হয়তো আপনার লাইফে অনেক ওয়েব সাইটেই একাউন্ট ওপেন করেছেন। কিন্তু সেই গুলো কবে খুলেছেন তা আপনি হয়তো বলতেই পারবেন না। হয়তো আনমানিক কোন বছর এর কথা বলতে পারেন কিন্তু তারিখ? আমি একটু মাজা করলাম মনে কিছু নিবেন না প্লিজ! আমি মজা করলেও একটি বিষয় সিরিয়াসলি বলেছি, তাহলো তারিখ। যাইহোক মূল কথাই আসি। আপনি যে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটেই ট্রেড করার জন্য একাউন্ট খুলেন না কেন, একাউন্ট খোলার সময় থেকে শুরু করে ব্যবহার করা অবধি যেসব একটিভিটি হবে তার একটি তথ্য রাখা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যেমন-

আপনি যেই দিন একাউন্ট খুলবেন তার সঠিক তারিখ, আইপি এ্যড্রেস, ইমেল, মোবাইল নাম্বার। এই গুলো কোন একটি সুরক্ষিত স্থানে লিখে রাখবেন। এর পর আপনি যদি আপনার একাউন্ট ভ্যরিফাই করার জন্য কোন ডকুমেন্টস সাবমিট করে থাকেন তবে কবে সেই ডুকমেন্ট সাবমিট করলেন, আর কবে তা ভ্যরিফাই হলো তারও তারিখ লিখে রাখবেন। আপনি আপনার একাউন্ট সিকিউরিটি বাড়ানোর জন্য 2FA একটিভ করলে কবে করলেন তার তারিখ এবং 2FA একটিভ করার সময় আপনাকে যে ব্যকআপ কোডটি দিবে তাও লিখে রাখবেন। আপনার একাইন্টে কত ব্যলান্স আছে মাঝে মাঝে তার একটি স্ক্রিনসট নিয়ে রাখতে পারেন।

এতসব পড়ার পর হয়তো ভাবছেন আমি কিসব বলছি! হ্যাঁ আপনার একাউন্টে কোন প্রবলেম না হলে তো কোন সমস্যা নাই। কিন্তু আল্লাহ্‌ না করেন আপনার একাউন্টে কোন একটি সমস্যার কারনে আপনার কোন তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। মনে করেন আপনার একাউন্টে যে ইমেল দিয়ে করাছিল তা কোন কারন বসত নষ্ট হয়ে গেছে যেমন ধরেন, আপনি জিমেল একাউন্ট ব্যবহার করছিলেন কোন কারন বসত: গুগল আপনার জিমেলটি ডিএকটিভ করে দিয়েছে। তাহলে যেই সব ক্রিপ্টোকারেন্সির এক্সচেন্জ মার্কেটে আপনার একাউন্ট রয়েছে সেই একাউন্ট গুলো রিকভার করার জন্য উপরের সকল তথ্যই আপনার প্রয়োজন হবে। তার মধ্যে কোন একটি বাদ পড়লে আপনার একাউন্ট ফিরে পাবার আশা হারাতে হবে। তাই নিজের একাউন্ট হেফাজত করার দায়িত্ব আপনার নিজেরই।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *