চট্রগ্রাম

ভ্রমনের প্রথম গল্প

ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যাতায়াত করা কতটা যত্রনার তা যারা করেন ঠিক তারাই বুঝতে পারেন। বিশেষ করে শুন্য থেকে ২/৩ বছরের বাচ্চা। তবে আল্লাহ্‌তায়ালার অশ্বেষ মেহেরবাণী যে, রাজশাহী থেকে চট্রগ্রাম পর্যন্ত ট্রেন পথে আমার মেয়েটা তেমন কোন জালা যন্ত্রনা করে নি, যতটা করেছিল রাজশাহী থেকে দিনাজপুর যাওয়া আসার পথে। আশা করি, দিনাজপুরের ভ্রমন কাহিনী নিয়ে সমনে কোন এক সময় লিখব।

যাইহোক, অবশেষে আমরা সুন্দর এবং সুস্থভাবেই চট্রগ্রাম পৌছালাম। কিন্তু এর পরেই শুরু হলো বিপাক। আমি আগেই বলেছিলাম এই ভ্রমন পথে আমি দুইটি বড় বিষয় ভুল করেছিলাম। আর সেই দ্বিতীয় ভুল হলো চট্রগ্রামে পৌছে বিশ্রাম না নিয়েই আমরা কক্সবাজারে জন্য বাসে উঠেছিলাম। আর এই ভুল ছিলো আগের ভুলের চাইতে অনেক গুন বেশি। আর তার চড়া মুল্যও দিতে হয়েছিল আমাকে।

চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বাসপথে যাত্রা শুরু

ষ্টেশন থেকে বের হয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম কক্সবাজার যাবার জন্য সবচাইতে কোন যানবহনে যাওয়া ভাল হবে। আমি মনে করেছিলাম একটি কার রিজার্ভ করে চলে যাব। আর সেই কথা সেই ব্যাক্তিকেও বললাম কিন্তু উনি বললেন কক্সবাজারের রস্তা লবন পানির করনে পিচ্ছিল থাকে তাই হালকা কোন যানে না যাওয়াটাই উত্তম। তাই উনি ষ্টেশনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাস দেখিয়ে দিলেন। আর তাতেই টিকিট কেঁটে উঠে পড়লাম, যদিও মনে হচ্ছিল বাসটি লোকাল হবে। আর শেষমেস তাই ছিল।

বাসে উঠার পূর্বে আমরা তেমন কোন নাস্তা করেছিলাম না। আমাদের কাছে আগে থেকেই কিছু শুকনো খাবার ছিল, আর সেগুলো থেকেই কিছু খেয়ে নিয়েছিলাম। বাস চলা শুরু করলো একটু একটু ভালই লাগছিল এই ভেবে যে, কক্সবাজার যাবার শেষ ধাপে পৌছেছি। কিন্তু এই ভাল লাগা খুব বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি। আমাদের বাস যখন প্রকৃত বাস-স্ট্যান্ডে পৌছালো তখন বুঝলাম এই বাসে উঠা ঠিক হয়নি। কিন্তু আর এসব ভেবে লাভ নাই, তাই ওসব চিন্তা বাদ দিলাম। তবে আপনাদের সুবিধার্থে বলে রাখি চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবার জন্য “সৌদিয়া” বাসটি জনপ্রিয়। যা পরে চট্রগ্রামের এক ভাইয়ের কাছে জানতে পারছিলাম। যদিও শেষমেশ “সৌদিয়া” বাসটিতেই গিয়েছিলাম। সেই কথাই পরে আসছি।

ভাললাগার ভ্রমন থেকে অসস্থির ভ্রমন

বাস চলতে শুরু করার অল্পকিছুক্ষন পর থেকেই আমার মেয়ে কান্নাকাটি করতে শুরু করে। কোন মতেই চুপ করাতে পারছিলাম না। এমনকি আমার নিজরও বসে থাকতে বিরক্তি লাগতে লেগেছিল। অল্প কিছুদুর যাবার পর আমার স্ত্রী বমি করতে শুরু করে, তার কিছুক্ষন পর আমার মেয়ে। তাদের দুইজনের অবস্থা দেখে আমার নিজের উপরই রাগ আর ঘৃনা হতে শুরু করেছিল। এই ভেবে যে, কেন আমি এমন করলাম, কেন আমি চট্রগ্রামে একটাদিন বিশ্রাম নিলাম না! একটানা এত বড় ভ্রমন করা আমার মোটেও উচিত হয়নি।

তাদের অবস্থা যখন খুবই খারাপ হতে লগলো তখন আর দেরি না করে মাঝ রাস্তাতে নেমে পড়লাম একটা বড় বাজার দেখে। সেখানে নেমে একটা হোটেলে উঠলাম ২/৩ ঘন্টা একটুু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। আর সেখানে থাকা অবস্থাই জানতে পারলাম সৌদিয়া বাসের কথা। যাইহোক, ২ ঘন্টা মত বিশ্রাম নিয়ে আবার কক্সবাজার যাওয়ার জন্য এইবার সৌদিয়া বাসে উঠলাম। কিন্তু ২ ঘন্টা বিশ্রাম খুব একটা কাজে দিলনা। কিছু দূর যেতে না যেতেই আবারও পূর্বের মত দুইজনের অবস্থা শুরু হলো। শেষমেশ কষ্ট আর যন্ত্রনার মাঝ দিয়ে দুপুর ২-টার দিকে কক্সবাজার বাস-স্ট্যান্ডে নামলাম।

বাস থেকে নামার পর একটা অটো নিয়ে কলাতলিতে পৌছালাম হোটেলে উঠার জন্য। আমি আগে থেকেই একটি হোটেলে মোবাইলে যোগাযোগ করে রুম ঠিক করে রেখেছিলাম; কিন্তু অটো চালক ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানলাম সেই হোটেলে পরিবার নেয় থাকার মত পরিবেশ নেই। সেখানে অধিকাংশই ব্যাচেলার গ্রুপ থাকে। তাই অটো চালক ভাইকেই বললাম এমন হোটেল এ নিয়ে যেতে; যেখানে, স্বাশ্রয়ী খরচে পরিবার নিয়ে থাকা যায়। সেই ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন “হোটেল সি হিল” এ। রুম দেখার পর ৪ রাত থাকার জন্য কনফার্ম করে উঠে পড়লাম সেই হোটেলে।

পর্যটন জায়গাগুলি পরিদর্শন

এরপর শুরু হলো আমদের কক্সবাজার এর পর্যটন জায়গাগুলি পরিদর্শন করা। প্রতিদিন একেক জায়গায় ঘুরার জন্য ছক তৈরি করে রাখতাম।

যেহেতু প্রথমদিন আমাদের যেতে যেতেই প্রায় বিকেল তাই সেইদিন শুধু দুপুরের খাবার খেয়ে অল্পসময় বিশ্রাম নিয়ে ঘুরতে গেলেম কক্সবাজারের সবচাইতে জনপ্রিয় বিচ সুগন্ধা বিচে। আমাদের থাকার হোটেলের নিচেই ছিল খাবার রেষ্টুরেন্ট তাই খাবার এর জন্য বেশি খোজাখুজি করতে হয়নি, যদিও তার আসে পাসে যথেষ্ট রেষ্টুরেন্ট রয়েছে।

দ্বিতীয়দিন ঘুরতে গেলাম হিমছড়ি পাহাড়, ঝরনা, ইনানি বিচ আর পাটওয়ারটেক বিচে। এর মধ্যে পাটওয়ারটেক বিচে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন পাথর, যার উপরে সমুদ্রের ঢেও-এর পানি আছড়ে পড়ছে। পাটওয়ারটেক বিচে যখন গিয়েছিলাম তখন প্রায় দুপুর ১২টা আর এইসময় ভাটার কারনে পানি কমতে থাকে, যার ফলে বিচের ধার ঘেসে যে পাথর গুলো ছিলো, সেই পাথরগুলো পানির মধ্য থেকেই জেগেছিলো। সময় যত বাড়তে লাগলো রদ্রুর তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে পানির মাত্রা আরো কমতে লাগলো। একসময় পাথরগুলো সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছিল। বিচের মধ্যে আমাকে অবশ্য এই বিচাটাই বেশি সুন্দর লেগেছে।

আমারা যেই রুটে গিয়েছিলাম পাটওয়ারটেক বিচ ছিল আমাদের রুটে দেখার মত শেষ পর্যটন এলাকা, আর তাই আমরা শেষ যায়গাতেই আগে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথ ধরলাম এসে থামলাম ইনানি বিচে, এইখানে এসে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে গসল করলাম। আমি বেশ কয়েক জনের মুখে শুনেছি সমুদ্রে গোসল করা নাকি স্বাস্থের জন্য ভাল। যাইহোক, সেখানে গোসল করে নামাজ আদায় করে যাত্রা দিলাম হিমছড়ির উদ্দেশ্যে, পাড়ার আর ঝরনা দেখার উদ্দেশ্যে।

হিমছড়ি পাহাড়ারে হাইপ্রেসার, বৃদ্ধ, হার্টের রুগি নিয়ে না উঠাই সর্বউত্তম। ঠিক মনে পড়ছে না, সম্ভবত ১৬০ অথবা ২০০ এর মতো সিড়ি বেয়ে সেই সুউচ্চ পাহাড়ে উঠতে হব। উঠতে যে কষ্ট ,তা উপরে উঠে সমুদ্রের দিকে তাকালে আর পাড়াহাড়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলে সব কষ্ট ভুলে যাবেন। অতি সুন্দর এক দৃশ্য, দেখে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যায়।

সুউচ্চ পাহাড় থেকে দৃষ্টি কাড়া দৃশ্য দেখে গেলাম ঝরনার দিকে একটু দূর থেকেই ঝরনার পানির শব্দ কানে আসছিলো। ঠান্ডা পানির ঝরনা সেখানেও গোসল করলাম। ঝরনার নিচে মাথা দিলে মনে হচ্ছেছিলো উপর থেকে বরফের পাথর পড়ছে।

সব দেখা শেষ করে ফিরলাম আমাদের থাকার হোটেল এর দিকে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *