যেখানে অর্থের লেনদেন সেখানেই সিকিউরিটি নিয়ে ভাবনা। প্রতিটি মানুষ যেমন তার নিজের জীবনের নিরপত্তা কামনা করে, ঠিক সেভাবেই তার অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চাই। আর তার জন্যেই ব্যাংক, লকার ইত্যাদির সৃষ্টি। আপনার অনেক টাকা পয়সা আছে কিন্তু আপনি তা নিজের কাছে বাড়ীতে রাখতে চান না, কারণ একটাই তা হচ্ছে নিরাপত্তা। আপনি আপনার অর্থ ব্যাংকে রাখেন এই কারণে যে সেখানে আপনার অর্থের নিরাপত্তা পাওয়া যাবে।

অফলাইনে মানুষ যেমন তার অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তা নিয়ে উদবেগ থাকে তার চাইতে বহুগুণে অনলাইনে লেনদেন করার জন্যে নিরাপত্তা প্রয়োজন। আমরা যারা অনলাইন ঘাটাঘাটি করি, তারা প্রায়ই দেখতে পাই বিভিন্ন হ্যাকিংয়ের নিউজ। দিন দিন যত সিকিউরিটি বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, হ্যাকাররা ততই নতুন নতুন বুদ্ধি খাটিয়ে সেই সিকিউরিটি হ্যাক করার চেষ্টা করছে। আর এই সব ঘটনা আমার আপনার নাকের ডগার সামনে দিয়ে ঘটে যাচ্ছে কিন্তু দেখা ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকছে না।

বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েনের লেনদেন বেড়েয় চলেছে। যার মধ্যেমে কটি কটি ডলারের লেনদেন করা হচ্ছে। এমন একটি সিষ্টেমের মাধ্যমে এত বড় মাপের লেনেদেন হয় অথচ এর সিকিউরিটি ব্যবস্থা মজবুত হবে না তা কি সম্ভব? আর তাই আপনার একাউন্টের সিকিউরিটি ব্যবস্থাকে মজবুত রাখার জন্য Ledger Nano S এর সৃষ্টি। Ledger Nano S এর ব্যবহার করে আপনি আপনার বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি নিরাপত্তার সাথে লেনদেন করতে বা ষ্টোর করে রাখতে পারেন।

Ledger Nano S কি এবং কিভাবে কাজ করে?

Ledger Nano S একটি ডিভাইস, যাকে হার্ডওয়ার ওয়ালেট বলা হয়। আমরা জানি প্রাইভেট কি ব্যবহার করে আমরা আমাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করতে পারি। এবং এই প্রাইভেট কি যতক্ষন নিরাপদ ততক্ষন আমাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট নিরাপদ। এখন বলতে পারেন, তাহলে আমি কেন Ledger Nano S ব্যবহার করবো? আপনার এমন প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক। তবে আপনি যখন ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন লেনদেন করার জন্য প্রাইভেট কি প্রদান করেন তখন তা আপনাকে সরাসরি দিতে হয়। অসাবধানতার কারণে আপনি যদি কোন ফিসিং সাইটে ভুলবসত আপনার প্রাইভেট কি প্রদান করেন, তবে সাথে সাথে তা বাইপাস হয়ে যাবে; মানে সেই ফিসিং সাইটে আপনার প্রাইভেট কি ষ্টোর হয়ে যেতে পারে। যা আপনার একাউন্টের জন্য বড় ধরনের হুমকি।

Ledger Nano X - The secure hardware wallet

তাহলে সহজেই বোঝা যায়, যতক্ষন আপনার প্রাইভেট কি নিরাপদ থাকবে ততক্ষনই আপনার একাউন্ট নিরাপদ থাকবে। মূলত প্রাইভেট কি নিরাপদ রাখার জন্যই Ledger Nano S ব্যবহার করা হয়। কারণ Ledger Nano S এ প্রাইভেট কি হাইড করা থাকে যা কোন সাইটে পাস করে না। যার ফলে আপনার একাউন্ট থাকে সুরক্ষিত।

Ledger Nano S ইন্সটল পদ্ধতি

Ledger Nano S ব্যবহার করার জন্য প্রথমে Ledger Live সফটওয়ারটি নামিয়ে ইনস্টল দিন। এর পর Ledger Live সফ্টওয়ারটি ওপেন করে আপনার Ledger Nano S টি ক্যাবল দিয়ে পিসির সাথে কানেক্ট করুন। যেহেতু আপনি আপনার Ledger Nano S টি প্রথম ব্যবহার করছেন তাই Ledger Live এ অন্যান্য অপশন থাকলেও create a new wallet দিয়ে শুরু করুন।

এখন আপনার Ledger Nano S এর ডিসপ্লেতে নিম্নের ছবির মতো Configure as New Device দেখালে ২নং বাটনটিতে চাপ দিন।

এইখানে আপনার শুবিধার জন্য বলে রাখা ভাল, Ledger Nano S এ দুইটি বাটন রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপরের ছবির মতো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লিখা আসবে (আপনার কাজের উপর নির্ভর) এবং সেই সাথে টিক ( ✓) চিহ্ন আসলে বুজবেন টিক চিহ্নের সোজা যেই বাটন আছে তাতে চাপ দিলে সেই কমান্ড রান করবে। আর অন্যান্য সময় যেমন আপনি যখন বিটকয়েন ট্রানজেক্শন করবেন তখন একসাথে দুই বাটন চাপ দিয়ে কনফার্ম করতে হয়। আরেকটু সহজ ভাষায় বলতে হলে বলতে হয়। যখন দেখবেন যেকোন একটি বাটন চাপ দিযে আপনার কাংক্ষিত কাজটি সামনে দিকে অগ্রসর হচ্ছে না তখন এক সাথে দুইটি বাটন চাপ দিবেন দেখবেন হয়ে যাবে।

আপনার Ledger Nano S টি কনফিগারেশন কমপ্লিট হয়ে গেলে পিন সেট করার অপশন আসবে। এখানে আপনি আপনার পছন্দমত ৮ সংখ্যার পিন দিবেন।

১ অথবা ২ বাটন চাপ দিয়ে সংখ্যা বাছায় করতে পারবেন এবং যে সংখ্যা বাছায় করবেন তা কনফার্ম করার জন্য একসাথে দুইটি বাটন চাপ দিয়ে কনফার্ম করতে হবে। মনে করেন আপনি ৮ ডিজিটের পিন সেট করার জন্য প্রথমে ৫ চয়েস করলেন, তাহলে ৫ কে কনফার্ম করা জন্য একসাথে দুইটি বাটন চাপদিয়ে সেই সংখ্যাটি কনফার্ম করতে হবে। এর পর দিলেন ১, এবার আবার ১ কনফার্ম করার জন্য এক সাথে দুইট বাটন চাপ দিয়ে কনফার্ম করতে হবে। এইভাবে ৮ টি সংখ্যা পিন হিসেবে সেট করবেন।

রিকভারি ফ্রেজ

পিন সেট করা সম্পূর্ণ হলে আপনাকে একটি একটি করে মোট ২৪টি শব্দ দেখাবে যা আপনাকে কোন একটি সুরক্ষিত জায়গায় লিখে রাখতে হবে। আপনি Ledger Nano S এর সাথে পাওয়া রিকভারি সিটে লিখে রাখতে পারেন। রিকভারি ফ্রেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনার Ledger Nano S টি কোন কারণে হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে এই রিকভারি ফ্রেজ ছাড়া আপনি আপনার একাউন্ট ফিরে পাবেন না। তাই রিকভারি ফ্রেজ স্বযতনে রেখে দিন।

অ্যপ ইন্সটল ও ট্রানজেক্শন পদ্ধতি

পিনসেট ও রিকাভারি ফ্রেজ একটিভ করা হয়ে গেলে এখন আপনার কাজ হচ্ছে Ledger Live এর মাধ্যমে অ্যপ ইন্সটল করা। আপনি যদি যেসব ক্রিপ্টোগুলো এইখানে রাখবেন সেই সব ক্রিপ্টোর অ্যপ গুলো ইন্সটল দিবেন। এর জন্য নিম্নের ছবির নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নং অপশনে যেখানে Manager লিখা আছে ক্লিক দিন আপনার Ledger Nano S এ পারমিশন চায়তে পারে, চাইলে Allow করুন। পারমিশন কমপ্লিট হলে সেখানে বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সির এ্যপ দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনি আপনার দরকারি অ্যপস গুলো ইন্সটল দিতে পারবেন। মনে করেন Bitcoin Aps টি ইন্সটল দিবেন। তাহলে বিটকয়েনের পাশে Install লিখাই ক্লিক দিলে অ্যপসটি ইন্সটল হয়ে যাবে।

যেসব অ্যপসগুলো ইন্সটল কমপ্লিট হবে, তা নিচের ২ নং স্থানে দেখতে পাবেন। এখন আপনি যদি আপনার বিটকয়েন ওয়ালেটে বিটকয়েন ডিপোজিট করতে চান তবে সদ্য ইন্সটল করা বিটকয়েন অ্যপসটি ২নং ঘর থেকে ক্লিক করুন তাহলে উপরের যে ছবিটি দেখছেন ঠিক সেই রকম দেখতে পাবেন। এখন Receive বাটনে ক্লিক দিন এবং আপনার Ledger Nano S থেকে Bitcoin সিল্কেট করুন। Ledger Nano S থেকে Bitcoin সিল্কেট করতে আপনার ডিভাইসের দুইটি বাটনের যেকোন একটিত চাপ দিয়ে দিয়ে Bitcoin লিখাটি আপনার Ledger Nano S এর ডিসপ্লেতে এনে একসাথে দুইটি বাটনে চাপ দিন।

উপরের দুইটি কাজ ঠিকঠাক মতো করা হলে আপনাকে Ledger Live এ বিটকয়েন রিসিভ করার জন্য একটি বিটকয়েন এ্যড্রেস দেখাবে এবং সেই সাথে আপনার Ledger Nano S ডিভাইসটিতেও একই এ্যড্রেস দেখাবে। নিশ্চত হওয়ার জন্য দুই জায়গায় দেখানো এ্যড্রেসটি মিলিয়ে নিন। সব ঠিক থাকলে আপনি উক্ত এ্যড্রেসে বিটকয়েন পাঠালে আপনার Ledger Nano S এ তা জমা হবে।

একটি বিষয়, Ledger Nano S এর মেমোরি খুবই কম, তাই অনেক এ্যপস্‌ ইন্সটল করার সময় Low Memory দেখাতে পারে সেক্ষেত্রে আপনি পূর্বের যেকোন এ্যপস্‌ আনইন্সটল করে অন্য এ্যপস্‌ ইন্সটল দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আপনি যে এ্যপস্‌টি আনইন্সটল করলেন তাতে থাকা আপনার ব্যালান্স হারিয়ে যাবার ভয় নেই। কারন আপনার ব্যালান্স ব্লকচেইনে সংরক্ষিত আছে। Ledger Nano S শুধু মাত্র আপনার প্রাইভেট কি ষ্টোর করে রাখে। তাই যখন আপনার সেই ব্যালান্সের প্রয়োজন হবে, তখন আবার সেই এ্যপস্‌টি ইন্সটল দিলেই আপনার ব্যালান্স আপনি দেখতে পারবেন, ট্রানজেক্শন করতে পারবেন।

আমি এখানে অল্প সময়ের মাঝে Ledger Nano S ব্যবহার করার পদ্ধতি বলার চেষ্টা করলাম। হয়তো এখানে কারো কোন প্রশ্ন থাকতে পারে। কারো প্রশ্ন থাকলে অুনগ্রহ করে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *