অনলাইন জগতে আর্নিং করার জন্য অনেক পথ রয়েছে। যে যার পছন্দ মতো বেছে নেই। এখানে কাউকে কোন বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। অনলাইনে আর্নিং এর জন্য রয়েছে দুইটি পথ একটি হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট আর্নিং ওয়ে অপরটি হচ্ছে ফ্রি ওয়ে।

earning-way

ইনভেস্টমেন্ট আর্নিং ওয়ে গুলো কি?

খুব সহজেই বুঝা যাচ্ছে যে ইনভেস্টমেন্ট আর্নিং ওয়ে কেমন হতে পারে। তারপরও সকলের সুবিধার জন্য বলছি। যে আর্নি ওয়েতে আপনার পকেট থেকে টাকা ইনভেস্ট করে কাজ করতে হবে তাকেই ইনভেস্টমেন্ট আর্নিং ওয়ে বলা হয়। এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে কোন গুলো ইনভেস্টমেন্ট ওয়ে? ইনভেস্ট করার মতো অনেক ওয়ে অনলাইনে বিদ্যমান। যার লিস্ট করতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে। সুক্ষভাবে বলতে গেলে অধিকাংশ অনলাইন আর্নিং ওয়েই হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট ওয়ে। যেমনঃ-

১। ফরেক্স
২। ক্রিপ্টোকারেন্সি
৩। সার্ভে (বাংলাদেশের জন্য ইনভেস্টমেন্ট কারণ বাংলাদেশে সার্ভের সাইট গুলো বাংলাদেশের আইপিতে ওপেন হয় না।)
৪। বাইনারি ইত্যাদি সহ অন্যান্য।

ফ্রি আর্নিং ওয়ে। যেমনঃ-

১। ফ্রি ল্যান্সিং ( Freelancer, oDesk ইত্যাদি। যদিও কাজ না জানা থাকলে আগে কাজ শিখা প্রয়োজন।)
২। মাইক্রোওয়ার্কস
৩। বাউন্টি (Bounty থেকে আয় করার উপায়) ইত্যাদি।

এখানে আমি, বর্তমানে আলোচনার মূল ইনভেস্টমেন্ট আর্নিং ওয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ফরেক্স এই দুইটি বিষয়ের পার্থক্য বা মিল নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি।

ফরেক্স মার্কেট

ফরেক্স মার্কেট কি এবং কিভাবে নতুন একাউন্ট খুলবেন তা আপনার জানা থাকলে আপনি ফরেক্স মার্কেটের সাথে ক্রিপ্টোকারেন্সির পার্থক্য বা মিল সহজে বুঝতে সক্ষম হবেন।

ফরেক্স মার্কেট এমন একটি প্লাটফর্ম যা খুবই রিক্সি। ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করতে গিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। আপনি খুব কম সংখ্যক ট্রেডার দেখতে পাবেন, যারা কিনা এই প্লাটফর্মে সাফল্যের সাথে টিকে আছেন। ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করার জন্য প্রথমে আপনাকে অবশ্যই দক্ষ ট্রেডার হতে হবে, নতুবা আপনিও হতে পারেন দেওলিয়াদের মধ্যে একজন। তাই ইমোশনের উপর ভর এই মার্কেটে ট্রেড করার দুঃস্বাহস করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন।

ফরেক্স vs. ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং -এ ফরেক্স মার্কেটের ফিচার

ডেমো ট্রেডিং সুবিধাঃ- ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড শুরু করার পূর্বে আপনি ডেমো একাউন্ট খুলে আপনার ট্রেডিং স্কিল পরিক্ষা বা দক্ষতা বাড়াতে পারেন। ডেমো ট্রেডিং সুবিধা ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে পাবেন না।

লেভারেজঃ- ফরেক্স মার্কেটে লেভারেজ সুবিধা পাওয়া যায়। যা ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে পাওয়া যায় না। ফরেক্স মার্কেটে বিভিন্ন ট্রেডিং ব্রোকারদের নিজস্ব পলিসির উপর নির্ভর করে ৫০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত লেভারেজ পাওয়া যায়। যার ফলে আপনার প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্ট না বাড়িয়ে বাড়তি লটে ট্রেডিং করার সুবিধা নিয়ে সর্বচ্চ প্রফিট করার সুবিধা ভোগ করে থাকবেন (সর্বচ্চ লস হবার সম্ভাবনা একই পরিমানে থাকে, এমনকি পুরো ইনভেস্টই হারাতে পারেন)। অতিরিক্ত লেভারেজ একাউন্টের জন্য হুমকি হয়ে থাকে।

কমিশনঃ- ফরেক্স মার্কেটে ট্রেডিং কমিশন সুবিধা রয়েছে যা ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং -এ পাবেন না। ফরেক্স মার্কেটে এক্সএম, এক্সনেস ইত্যাদি ব্রোকার গুলো তাদের ইসিএন একান্ট খুলে ট্রেড করলে নির্দিষ্ট লটের উপর কমিশন দিয়ে থাকে।

forex vs cryptocurrency

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট সম্বন্ধে জানার পূর্বে আমাদের জানা দরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং কিভাবে এর উত্তপত্তি। আর যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল শেকড়ই শুরু ব্লকচেইন টেকনোলজির হাত ধরে, তাই আমাদের জেনে রাখা ভাল ব্লকচেইন কি এবং কিভাবে কাজ করে

তারপরেও ছোট্ট করে বলতে গেলে বলা যায়, ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি ডিজিটাল কারেন্সি। যার কোন অস্তিত্ব নেই। যাকে ধরা যায় না, ছুয়া যায় না। শুধু মাত্র অনলাইনেই ব্যবহার করা যায়। ফরেক্স মার্কেটের মতো, এই মার্কেটও একটি রিক্সি মার্কেট।

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের ফিচার সমূহ

ফরেক্স vs. ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের তুলনা করতে গিয়ে ফরেক্স মার্কেটের যে তিনটি ফিচার উল্লেক্ষ করা হয়েছে তার কোনটিই ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে বিদ্যমান নেই। তাহলে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে আছে টা কি? এমন কিছু ভাবা শুরু করার পূর্বে চলুন জেনে নেই ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে কি ধরনের ফিচার আছে।

ইনভেস্টমেন্ট সুবিধাঃ- ফরেক্স একটি ইনভেস্টমেন্ট আর্নিং ওয়ে যাতে আর্নিং করার প্রথম শর্ত আপনাকে ইনভেস্ট করতে হবে। তারপর ট্রেডিং করে প্রফিট বা লস। অর্থাৎ আপনি ইনভেস্ট করে শুধু বসে থাকলে হবে না, আপনাকে লাভের মুখ দেখার জন্য অবশ্যই ট্রেড করতে হবে। কিন্তু আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে ইনভেস্টমেন্ট সুবিধা পাবেন। আপনি যদি ট্রেড করতে নাও চান তবে এখানে লাভ বা লস রয়েছে। অর্থাৎ আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে ইনভেস্ট করে হোল্ড করতে পারেন। যা ফরেক্স মার্কেটে পাবেন না।

আপনি ট্রেডিং-এ ভাল দক্ষ না হলেও কোন সমস্যা নাই। আপনি আপনার পছন্দের যে কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি যেমন বিটকয়েন, ইথেরিয়াম ইত্যাদি কিনে রেখে দিতে পারেন। যা পরে দাম বাড়লে আবার বিক্রি করে আপনি খুব সহজেই প্রফিট করতে পারেন। যা ফরেক্সে সম্ভব না।

যারা শেয়ার মার্কেটের সাথে পরিচিত তারা বিষয়টি খুব সহজেই বুঝে নিতে পারবেন। শেয়ার মার্কেটে যেমন শেয়ার কিনে হোল্ড করা হয় দাম বাড়ার জন্য, ঠিক তেমন ভাবেই আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে কয়েন কিনে রেখে হোল্ড করতে পারেন দাম বাড়ার জন্য।

ব্যালান্স জিরো থেকে নিরাপদঃ- ফরেক্স মার্কেটে যেহেতু ট্রেড না করলে আপনার লাভের কোন সম্ভাবনা কোন ভাবেই নেই। যার ফলে ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করতে গিয়ে আপনার একাউন্ট সম্পূর্ণ জিরো হওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে আপনি যদি কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ সাইটে ট্রেড নাও করতে চান, তবুও সমস্যা নাই। কারন যেহেতু এখানে ট্রেড না করে শুধু মাত্র ইনভেস্টের মাধ্যমে হোল্ড করে প্রফিট করার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে আপনার একাউন্ট ব্যালান্স জিরো হবার কোন ভয় নেই। হ্যাঁ দাম কমার কারনে আপনার হোল্ডিং করা কয়েনের দাম কমতে পারে কিন্তু কয়েন যা ছিলো তাই রবে শুধু মাত্র মান কমবে। আর আপনি যেহেতু হোল্ড করছেন তাই যখন আবার দাম বড়বে তখন তার মানও বাড়বে সাথে প্রফিট পাবার তো সমুহ সম্ভাবনা রয়েছেই।

যে কেউ ইনভেস্ট করতে পারেঃ- ক্রিপ্টোকারেন্সি এমন এক প্লাটফর্ম যেখানে অভিঙ্গ, অনভিঙ্গ যে কেউ ইনভেস্ট করে প্রফিট করতে পারে, যা ফরেক্স মার্কেটে কোন ভাবেই সম্ভব নই। ফরেক্স মার্কেটে শুধু তারাই লাভবান হতে পারে যারা দক্ষ ট্রেডার। আর যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে ট্রেড করা ব্যতিরকেই শুধু মাত্র ইনভেস্ট করে হোল্ডিং করাই প্রফিট করা সুযোগ রয়েছে তাই এই মার্কেটে অদক্ষ ট্রেডারাও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

হোল্ডিং কমিশনঃ- আমি যদিও বলেছিলাম ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে কমিশন পাবার সুযোগ নেই, তা কিছুটা ঠিক হলেও সম্পূর্ণ ঠিক নাও ধরা যেতে পারে। হ্যাঁ, এইটা ঠিক যে ট্রেড করে ফরেক্সের মতো এখানে কমিশন পাবার সুযোগ নেই। তবে, কিছু কিছু কয়েন হোল্ডিং করে কমিশন পাবার ‍সুযোগ রয়েছে। তাই বলতে গেলে ফরেক্সের কমিশনের চাইতে ক্রিপ্টোকারেন্সির কমিশন অনেক নিরাপদ ও সহজ। কারণ আপনি যদি ফরেক্সে ট্রেড করেন তবেই আপনি কমিশন পাবেন, নতুবা নই। যার ফলে কমিশন পাবার জন্য ট্রেড করার কারণে আপনার ট্রেডে লসও করতে পারেন। ফলাফল, ৫০ পয়সার কমিশন আয় করতে গিয়ে ৫ টাকা লস।

কিন্তু কোন প্রকার লস ছাড়াই, শুধু মাত্র আপনার ইনভেস্ট কৃত টোকেন বা কয়েন হোল্ড করে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে কমিশন পাবার সুযোগ রয়েছে। যেমনঃ- NEO, NPXS ইত্যাদি কয়েন হোল্ড করলে কমিশন পাওয়া যায়।

ফরেক্স ও ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের সমস্যা

এতক্ষন যা আলোচনা করা হলো তা ছিলো ফরেক্স vs. ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্থাৎ উভয়ের মাঝে ফিচার গুলো কমপেয়ার করা। কিন্তু এই উভয় মার্কেটের মাঝে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিল রয়েছে। আর তা হচ্ছে উভয় মার্কেটেই হাই ভলটালিটি বিদ্যমান। যার ফলে ট্রেডাররা সাংঘাতিক বিপদে পড়ে থাকেন। যে মার্কেটে যত বেশি ভলটালিটি বিদ্যমান সেই মার্কেট তত বেশি রিক্সি। তাই ফরেক্স এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট একটি রিক্সি মার্কেটে।

সতর্কতাঃ- ফরেক্স ও ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট অধিক ভলটালিটির কারনে ট্রেডিং করা অনেক বেশি বিপদজনক। তাই এই পোষ্টে কাউকে এই মার্কেটে ট্রেড করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে না। যদি কেউ ট্রেড করতে চাই, তবে তা সে নিজের দায়িত্বে করবে, এর জন্য এই ব্লগের কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ থাকবে না।